হযরত যায়নাব বিনত খুযায়মাকে (রাঃ)


হযরত যায়নাব বিন্ত খুযায়মা ইবন আল-হারিস আল-হিলালিয়্যা ছিলেন বনু বাকর উবন হাওয়াযিনের কন্যা। তাঁর উপাধি বা লকব ছির উম্মুল মাসাকীন। উহুল যুদ্ধে তাঁর স্বামী শাহাদাত বরণ করলে ঐ বছরই রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বিয়ে করেন এবং তিনি উম্মুল মু’মিনীন-এর অতুলনীয় মর্যাদার অধিকারিণী হন।



হযহর যায়নাব বিন্ত খুযায়মার (রা) প্রথম বিয়ে কার সাথে হয় সে ব্যাপারে মতপার্থক্য আছে। বালাজুরী, ইবনুল কালবী এবং নসববিদ আবুল হাসান আলী আল-জুরজাননীর মতে, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে বিয়ের আগে তার প্রথম স্বামী ছিলেন তুফইল ইবন আল-হাসি। তুফাইলইবন আল-হারিস। তুফাইল তালাক দিলে তার ভাই উবায়দা ইবন আল-হারিস তাঁকে বিয়ে করেন। বদরে তিনি আহত হয়ে আস-সাফরাতে মারা যান। তখন উবায়দার বয়স ৬৪ বছর। তারপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৃতীয় হিজরীর রমযান মাসে তাঁকে বিয়ে করেন। একথা বালাজুরী ও ইবন সা’দ বলেছেন।



ইউনুস ইবন মুহাম্মদ, ইবন ইসহাকের সূত্রে বলেছেন, পূর্বে তিনি আল-হুসাইন ইবনুল হারিস ইবন-আবদিল মুত্তালিবের স্ত্রী ছিলেন, অথবা তাঁর ভাই আত-তুফাইল ইবন আল-হারিসের। ইবন হিশাম বলেনঃ রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে বিয়ের পূর্বে তিনি উবায়দা ইবনুল হারিসের স্ত্রী ছিলেন। আর উবায়দার পূর্বে তিনি স্ত্রী ছিলেন জাহম ইবন আমর ইবনুল হারিসের। এই জাহম ছিলেন তাঁর চাচাতো ভাই।



তবে ইবন আবদিল বার ও ইবনুল আসীরে মতে, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে বিয়ের অব্যবহিত পূর্বে তিনি আবদুল্লাহ ইবন জাহাশের স্ত্রী ছিলেন। হিজরী তৃতীয় সনে এই আবদুল্লাহ উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। কাফিররা তাঁর দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে বিচ্ছিন্ন করে লাশ বিকৃত করে ফেলে। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফুফু উমাইমা বিনত আবদিল মুত্তালিবের ছেলে। স্বামীর এমন মৃত্যুতে হযরত যায়নাব (রা) দারুণ ব্যাথা পান। ইমাম যুহরীও একথা বলেছেন।



তৃতীয় হিজরীর রমযান মাসের প্রথম দিকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বিয়ে করেন এবং দেন মাহর বাবদ বারো উকিয়া সোনা দান করেন। ইবন হিশাম বলেন, চার শো দিরহাম দেন মাহরের বিনিময়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বিয়ে করেন। এ বিয়ের মধ্যস্থতা করেন কুবায়সা ইবন আমর আল-হিলালী (রা)। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে বিয়ের পর, কোন কোনবর্ণনান মতে, দুই অথবা তিন মাস জীবিত ছিলেন। বালাজুরী বলেন, আট রবী‘উস সানী মাসের শেষ দিকে মারা যান। এ মতটিই সঠিক বলে মনে হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল তিরিশ বছর। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রওীদের মধ্যে তিনিই তাঁর জীবদ্দশায় হযরত খাদীজার পর প্রথম জান্নাতবাসিনী হন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জানাযার নামায পড়ান এবং মদীনার বাকী গোরস্থানে দাফন করেন।



ইবন হাজার (রা) বলেন, হযরত হাফসার (রা) পরে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়নাব বিনত খুযায়মাকে (রা) ঘরে আনেন। হযরত উম্মু সালামার (রা) একটি বর্ণনায় এসেছে, যায়নাব বিনত খুযায়মার মৃত্যুর পর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বিয়ে করে তাঁরই ঘরে এনে উঠান।



কেউ কেউ বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ বাণী



(তোমাদের মধ্যে যার হাত দীর্ঘ সেই খুব তাড়াতাড়ি আমার মৃত্যুর পর আমার সাথে মিলিত হবে।) দ্বারা যায়নাব বিনত খুযায়মার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ‘দীর্ঘ হাত’ কথাটি রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যার অর্থ দানশীলতা। যেহেতু হযরত যায়নাব, খুব বেশি দান-খায়রাত করতেন, তাই ‘লম্বা হাত’ বলে তাঁকে বুঝানো হয়েছে।



কিন্তু তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। মূলত এ হাদীস দ্বারা যায়নাব বিনত জাহাশকেই (রা) বুঝানো হয়েছে। তাঁর মৃত্যু হয় রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওফাতের পরে সকর্যওয়াজে মুতাহ্হারাতের আগে। আর মুহাদ্দিসগণ তো এ ব্যাপারে একমত যে, যায়নাব বিনত খুযায়মা (রা) রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবদ্দশায় ইনতিকাল করেন।



ইবন হিশাম বলেনঃ

-গরীব-মিসকীনদের প্রতি তাঁর দয়া-মমতা ও সহমর্মিতার কারণে, তাঁকে ‘উম্মুল মাসাকীন’ বা মিসকীনদের মা’ বলা হতো।



হাফেজ ইবন হাজার (রা) বলেনঃ

তিনি গরীব-মিসকীনদের আহার করাতেন এবং তাদেরকে দান-খায়রাত করতেন, এ কারণেতাঁকে উম্মুল মাসাকীন’ বলা হতো।’



ইবন ‘আবদিল বার ও বালাজুরী বলেন, জাহিলী যুগেই

Comments

Popular posts from this blog

হযরত হাফসা (রাঃ)

হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রা)

হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)