হযরত সাফিয়্যা (রাঃ)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত সাফিয়্যা (রা) বিনত হুয়ায় ইবন আখতাব ছিলেন লাবী ইবন ইয়াকু-এর বংশধারায় হযরত হারুন ইবন ইমরান আলাইহিস সালামের বংশধর। এ কারণে তাঁকে সাফিয়্যা বিনত হুয়ায় ইসরাঈলিয়্যা বলা হয়। তাঁর পিতা হুয়ায় ইবন আখতাব মদীনার বিখ্যাত ইহুদী গোত্র বনু নাদীরে এবং মাতা ‘বাররা’ বিনত সামাওয়াল ইহুদী গোত্র বনু কুরাইজার সন্তান।
মূলতঃ হরত সাফিয়্যার (রা) আসল নাম যায়নাব। যেহেতু তিনি খায়বার যুদ্ধের গনীমাতের মাল হিসেবে মুসলমানদের অধিকারে আসেন এবং বণ্টনের সময় রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাগে পড়েন, আর তৎকালীন আরবে নেতা অথবা বাদশার অংশের গনীমাতের মালকে সাফিয়্যা বলা হতো, তাই যায়নাবও সেখানে থেকে সাফিয়্যা নামে প্রসিদ্ধ হয়ে যান এবং তাঁর আসল নামটি হারিয়ে যায়। সিয়ারুস সাহাবিয়াত’ গ্রন্থকার যুরকানীর সূত্রে একথা বলেছেন।
হযরত সাফিয়্যার (রা) পিতা ও নানা উভয়ে নিজ নিজ খান্দানের অতি সম্মানীয় নেতা ছিলেন। অতি প্রাচীনকাল থেকে আরবের উত্তরাঞ্চলে বসবাসরত ইহুদী সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁদের দুইটি খান্দান-বনু কুরাইজা ও বনু নাদীর অন্যসব আরবীয় ইহুদী খান্দানের চেয়ে বেশি সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী বরে গণ্য হতো। গোত্রের প্রতিটি ইবন আখতাবকে সীমাহীন সম্মান ও মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা হতো। গোত্রের আরব সদস্য তাঁর হুকুম ও নেতৃত্ব বিনা প্রশ্নের মেনে নিত। নানা সামাওয়াল গোটা আরব উপদ্বীপে বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। মোটকথা, হযরত সাফিয়্যা (রা) পিতৃ ও মাতৃকূলের দিক দিয়ে দারুণ কৌলিন্যের অধিকারিণী ছিলেন। --##--
বিয়েঃ
বনু কুরাইজার সালাম ইবন মাশকাম ছিলেন একজন বিখ্যাত কবি ও নেতা। তাঁর সাথে হযরত সাফিয়্যার (রা:) প্রথম বিয়ে হয়, এ বিয়ে টেকেনি। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর হিজাযের বিখ্যাত সওদাগর ও খায়বরের অন্যতম নেতা আবু রাফে‘-এর ভাতিজা কিনানা ইবন আবিল হুকাইক-এর সাথে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। সম্মান ও প্রতিপত্তির দিক দিয়ে কিনানা সালামের চেয়ে কোন অংশে কম ছিলেন না। তিনি খায়বারের অতি প্রসিদ্ধ দুর্গ ‘আল-কামূসে’র নেতা এবং বড় কবি ছিলেন। পরিবার-পরিজনসহ এই দুর্গেই বসবাস করতেন। এক প্রচন্ড রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে খায়বার যখন মুসলমানদের অধিকারে আসে এবং আল-কামূস’ দূর্গের পতন ঘটে তখন দূর্গের অভ্যন্তরেই হযরত সাফিয়্যার (রা) স্বামী কিনানা নিহত হন এবং সাফিয়্যাসহ তঁর পরিবারের অন্যসব সদস্য মুসলমানদের হাতে বন্দী হন। তাঁদের মধ্যে সাফিয়্যার (রা) দুইজন চাচাতো বোনও ছিলেন। ইবন ইসহাক বলেছেন, সাফিয়্যা (রা) ছিলেন কিনানার তরুণী স্ত্রী। মাত্র কিছুদনি আগেই তাঁদের বিয়ে হয়েছিল।
এ যুদ্ধ কায়বারের ইহুদীদের জন্য এত বিপর্যয়কর ছিল যে, তাদের সকল আশা-ভরসা কর্পূরের মত উড়ে যায় এবং ভবিষ্যতে তারা মাথা তুরে দাঁড়াবার সকল যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। এ যুদ্ধে তাদের সকল নামী-দামী নেতা নিহত হন। নিহতদের মধ্যে হযরত সাফিয়্যার (রা) পিতা এবং ভাইও ছিলেন। এ কারণে তিনি সকল যুদ্ধ বন্দীর মধ্যে অধিকতর দয়া ও অনুগ্রহ রাভের যোগ্য ছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী যখন ‘মারে গনীমাত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ ও দাস-দাসী) মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টনের প্রস্ত্তি চলল এবং এ উদ্দেশ্যে সকল বন্দীকে একত্র করা হলো, তখন দাহইয়াতুল কালবী রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর একটি দাসীর প্রয়োজনের কথা জানালেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বন্দী মেয়েদের মধ্য থেকে পছন্দ করার অনুমতি দিলেন। দাহইয়া (রা) সাফিয়্যাকে (রা) পছন্দ করলেন। যেহেতু মান-মর্যাদার দিক দিয়ে হরতর সাফিয়্যা (রা) দাহইয়ার (রা) চেয়েও উঁচু স্তরের ছিলেন, এ কারণে সাহাবীদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সাফিয়্যা (রা) বনু নাদীর ও বনূ কুরাইজার নেত্রী। সে আপনারই উপযুক্ত।’ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ পরামর্শ গ্রহণ করলেন এবং সাফিয়্যাসহ দাহইয়া কালবীকে ডেকে আনালেন। তিনি দাহইয়াকোন্য একটি দাসী পছন্দ করতে বলে সাফিয়্যাকে (রা) নিজের কাছে রেখে দিলেন। পরে তাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে বিয়ে করেন। সহীহ আল বুখারীতে এসেছে দাসত্ব থেকে মুক্তিই তাঁর মাহর ধার্য হয়।
উমাম শাফি‘ঈ কিতাবুল উম্ম’ গ্রন্থে আল-ওয়াকিদীর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাহইয়া কলবীকে সাফিয়্যার (রা) পরিবর্তে তাঁর স্বামী কিনানার বোনকে দান করেন। ইবন ইসহাক বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সাফিয়্যার (রা) চচাতো বোনকে দান করেন। সহীহ মুসলিমে এসেছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাতজন বন্দীর বিনিময়ে দাহইয়ার নিকট থেকে সাফিয়্যাকে (রা) খরীদ করেন। আল্লামা যুরকানী বলেন, খরীদ করা কথাটি আসল অর্থে নয়।
এ হিজরী ৭ম সনের ঘটনা। বুখারীর একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার অভিযান শেষ করে মদীনায় ফেরার পথে ‘সাহ্বা’ নামক স্থানে যাত্রাবিরতি করেন। সেখানে হযরত আনাসের (রা) মা হযরত উম্মু সুলাইম (রা) সাফিয়্যার (রা) মাথায় চিরুনী করেন, কপড় পাল্টান এবং তার দেহে সৃগন্ধি লাগান। তারপর তাকে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে পাঠান। সেখানে বাসর হয় এবং সেখানে ওলীমাও হয়। কেউ খেজুর, কেউ চর্বি, কেউ হাইস অর্থাৎ যার কাছে খাবার যা কিছু ছিল নিয়ে এলো। সব যখন একত্র হলো তখন সবাই এক সাথে বসে আহার করেন। মূলতঃ এটাই ছির ওলীমা। এই ওলীমার কথা সহীহাইনে হযরত আনাস (রা) থেকে বির্ণত হয়েছে। এই ‘সাহবাহতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়্যার (রাঃ) সাথে তিন দিন কাটান। প্রথম বাসর রাতে হযরত আবু আইউব আলী-আনসারী (রা) রাসূলুলত্মাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অজান্তে কোষমুক্ত তরবারি হাতে সারা রাত রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁবুর দরজায় পাহারা দেন। সকালে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেন, এই মহিলার পিতা, স্বামী, ভাইসহ সকল নিকট আত্মীয় নিহত হয়েছে। তাই আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, কোন খারাপ কিছু করে না বসে। তাঁর কথা শুনে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটু হেসে দেন এবং তাঁর জন্য দু’আ কনের।
‘সাবা’ থেকে যখন সাফিয়্যাকে (রা) নিজের উটের উপর বসিয়ে যাত্রা করেন তখন লোকেরা বুঝতে পারছিল না যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বেগমের মর্যদা দান করেছেন, না দাসী হিসেবে নিজের মালিকানায় রেখেছেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষের এ মনোভাব বুঝতে পেরে একটি পর্দা টানিয়ে সাফিয়্যাকে (রা) মানুষের দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যান। মূলতঃ এ পর্দা দ্বারা একথা জানিয়ে দেন যে, সাফিয়্যা (রা) দাসী নন; বরং তিনি পবিত্র বেগমের মর্যাদা লাভ করেছেন। কোন কোন বর্ণণায় এসেছে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় ‘আবা’ দ্বারা পর্দা করেন। ‘সাহবা’ থেকে চলার পথে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাফিয়্যার (রা) বাহন উটটি হোঁচট খায়। তাতে পিঠের আরোহীদ্বয় ছিটকে পড়ে যান। আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে অক্ষত রাখেন। পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে হযরত আবু তালহা (রা) তাঁর বাহনের পিঠ থেকে লাফিয়ে পড়ে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে টুটে যেয়ে বলেনঃ ইয়া নাবিয়্যাল্লাহ! আপনি কষ্ট পেয়েছেন কি? তিনি জবাব দেনঃ ‘না। তুমি মহিলাকে দেখ।’ সাথে সাথে আবু তালহা কাপড় দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে দিয়ে হযরত সাফিয়্যার (রা) দিকে এগিয়ে যান এবং তাঁর উপর একখানি কাপড় ছুড়ে দেন। সাফিয়্যা (রা) উঠে দাঁড়ান। আবু তালহা নিজের উটটি প্রস্ত্তত করেন এবং তার উপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়্যাকে (রা) নিয়ে আরোহন করেন।
‘সাবা’ থেকে যাত্রার সময় রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাঁটুর উপর হযরত সাফিয়্যা (রা) পা রেখে উটের পিঠে আরোহন করেন। --##--
হযরত জাবির (রা) বলেনঃ
সাফিয়্যাকে (রা) যখন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁবুতে ঢোকানো হলো, আমরা সেখানে উপস্থিত হলাম। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘তোমরা তোমাদের মায়ের কাছ থেকে ওঠো।’ সন্ধ্যায় আমরা আবার গেলাম। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে আসলেন। তখন তাঁর চাদরের মধ্যে দড় ‘মুদ’ পরিমাণ ‘আজওয়া’ খেজুর ছিল্ তিনি আমাদেরকে বললেনঃ তোমরা তোমাদের মায়ের ওলীমা খাও।’ মদীনা পেঁছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত সাফিয়্যাকে প্রখ্যাত সাহাবী হারিস ইবন নু‘মানের (রা) বাড়ীতে উঠালেন। হযরত হারিস (রা) ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন জান-কোরবান সাহাবী। আল্লাহ তাঁকে অঢেল অর্থও দান করেছিলেন। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রয়োজনের কথাও সব সময় স্মরণ রাখতেন। প্রয়োজনের সময় দ্রুত এগিয়ে আসতেন। হযরত সাফিয়্যাকেও তিনি সানন্দে থাকার জন্য ঘর ছেড়ে দেন। উম্মু সিনান সালমিয়্যার বর্ণনা থেকে জানা যায়, হযরত সাফিয়্যার (রা) রূপ ও সৌন্দর্যের কথা শুনে আনসার মহিলাদের সাথে হযরত যায়নাব বিনত জাহাশ, হযরত হাফসা, হযরত ইয়াসার বর্ণনা করেছেন, আনসার মেয়েদের সাথে হযরত আয়িশাও (রা) মুখে নিকাব টেনে সাফিয়্যাকে দেখতে আসেন। ফেরার সময় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পিছনে যান এবং প্রশ্ন করেন।
-‘আয়িশা! তাঁকে কেমন দেখলে?
-‘আয়িশা (রা) বললেনঃ দেখেছি, সে তো এক ইহুদী নারী। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এমন বলো না। সে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং একজন ভালো মুসলমান হয়েছে।
উম্মুল মুমিনীন হযরত সাফিয়্যা (রা) ছিলেন খুবই দূঢ় চিত্তের মহিলা। জীবনে কখনও অধৈর্য্য হয়েছেন এমন কথা জানা যায় না। আল-কামূস দূর্গের পতন ঘটলে এবং গোটা খায়বরে ইসলামের পতাকা উড্ডীন হলে হযরত বিলাল (রা) সাফিয়্যা (রা) ও তাঁর চাচাতো বোনদের সঙ্গে করে রাসূরুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট যেতে থাকেন। ইহুদীদের লাশের পাশ দিয়েই তাঁরা চলছিলেন। সাধারণতঃ এরূপ পরিস্থিতি খুবই মর্মস্পর্শী হয়। অত্যন্ত শক্ত মনের মানুষের অন্তরও কেঁপে ওঠে। এ কারণে তাঁর সাথের মহিলারাও এ ভয়াবহ দৃশ্য দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠে। তাঁরা মাথার চুল ছিঁড়ে মাতম করতে থাকে। কিন্তু হযরত সাফিয়্যার (রা) অবস্থা দেখুন। প্রিয় স্বামীর লাশের পাশ দিয়ে বন্দী অবস্থায় চলছেন, তিনি একটুও বিচলিত নন। কোন রকম ভাবান্তর নেই। দৃঢ় পদক্ষেপে তিনি হেঁটে চলেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরে এভাবে তাঁদের বাপ-ভাইয়ের লাশের পাশে দিয়ে আনার জন্য বিলালকে (রা) তিরস্কার করেন।
রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি হযরত সাফিয়্যার ছিল অন্তহীন ভালোবাসা। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন হযরত আয়িশার (রা) গৃহে অন্তিম রোগশয্যায় তখন একদিন সাফিয়্যা (রা)সহ অন্য বিবিগণ স্বামীকে দেখতে ও সেবা করতে একত্র হয়েছেন। হযরত সাফিয়্যা (রা) এক সময় অত্যন্ত ব্যথা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বললেনঃ ‘হে আল্লাহর নবী! আপনার এই সব কষ্ট যদি আমিই ভোগ করতাম, খুশী হতাম।’ তাঁর এমন কথা শুনে অন্যান্য বিবিগণ একে অপরের দিকে এমন ভাবে তাকাতে লাগলেন যেন, তাঁর কথায় তাঁরা সন্দেহ করছেন। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আল্লাহর কসম! সে সত্য বলেছে।’
হযরত সাফিয়্যার (রা) প্রতি হযরত রাসূলে কারীমের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালোবাসসায় অবস্থা ঠিক এরকম ছিল। সাফিয়্যার (রা) সঙ্গ তিনি পছন্দ করতেন এবং সব সময় তাঁকে খুশী রাখার চেষ্টা করতেন। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়্যাসহান্য বেগমগণকে সংগে নিয়েং হজ্জের সফরে বের হয়েছেন। পথিমধ্যে সাফিয়্যার (রা) বাহন উটটি অসুস্থ হয়ে বসে পড়ে। সাফিয়্যা (রা) ভয় পেয়ে যান এবং কান্না শুরু করে দেন। খবর পেয়ে রাসূলুলত্মাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসেন এবং নিজের পবিত্র হাতে তাঁর চোখের পানি মুছে দেন। কিন্তু এতেও তাঁর কান্না না থেমে আরও বেড়ে যায়। উপায়ান্তর না দেখে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকলকে নিয়ে সেখানে যাত্রাবিরতি করেন। সন্ধ্যার সময় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রী হযরত যায়নাব বিনত জাহাশকে (রা) বলেন, ‘যায়নাব, তুমি সাফিয়্যাকে একটি উট দিয়ে দাও।’ হযরত যায়নাব (রা) বললেন, আমি উট দিব আপনার এই ইহুদী মহিলাকে?’ তাঁর এমন প্রত্যুত্তরে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভীষণ নাখোশ হন এবং দুই অতবা তিন মাস যাবত হযরত যায়নাবের (রা) সাথে কথা বলা এবং কাছে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন। অবশেষে হযরত আয়িশার (রা) মধ্যস্থতায় অতি কষ্টে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ অসন্তুষ্টি তিনি দূর করান।
আর একবার হযরত আয়িশা (রা) হযরত সাফিয়্যার (রা) দৈনিক গঠন সম্পর্কে একটি মন্তব্য করলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি এমন একটি কথা বলেছো, যদি তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাতে মিশে যাবে। অর্থাৎ সাগরের পানিও ঘোলা করে ফেলবে।
ইসলাম গ্রহণ করে পবত্রি হওয়ার পর তাঁকে এক ইহুদী বলে কটাক্ষ করলে তিনি ভীষণ কষ্ট পেতেন। একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ঘরে গিয়ে দেখেন, তিনি কাঁদছেন। কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘আয়িশা (রা) ও যায়নাব (রা) দাবী করে যে, তাঁরা অন্য বেগম গণের চেয়ে উত্তম। কারণ, তাঁরা আপনার বেগম হওয়া ছাড়াও চাচাতো বোন।’
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে খুশী করার জন্য বলেন, তুমি তাদেরকে একথা কেন বললে না যে, আমার বাবা হারূন (আ), আমার চাচা মূসা (আ) এবং আমার স্বামী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। এ কারণে তোমরা আমার চেয়ে ভালো হতে পার কিভাবে।
হযরত সাফিয়্যা (রা) স্বভাবগতভাবেই ছিলেন অত্যন্ত উদার ও দানশীল। ইবন সা‘দ লিখেছেন, যে ঘর খানিতে তিনি বসবাস করতেন জীবদ্দশায় তা দান করে গিয়েছিলেন। আল্লামা যুরকানীর বর্ণনায় জানা যায়, উম্মুল মু’মিনীন হিসেবে মদীনায় আসার পর তিনি নিজের কানের সোনার দুইটি দুল হযরত ফাতিমা (রা) ওান্য আওয়াজে মুতাহ্হারাতের মধ্যে ভাগ করে দেন।
হিজরী ৩৫ সনের বিদ্রোহীরা তৃতীয় খলীফঅ হযরত উসমানকে (রা) মদীনায় তাঁর গৃহোবরুদ্ধ করে রাখে। সে সময় হযরত সাফিয়্যা (রা) খলীফার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। বিদ্রোহীরা যখন খলীফার গৃহে বাইরে সকল সরবরাহ ও যোগ্যযোগ বন্ধ করে দেয়, তাঁর গৃহের চতুর্দিকে পাহারা বসায়, তখন একদিন হযরত সাফিয়্যা (রা) খচ্চরের উপর চড়ে খলীফার গৃহের দিকে যেতে থাকেন, সংগে দাস ছিল। তিনি আশতার নাখ‘ঈর দৃষ্টিতে পড়ে যান। আশতার তাঁর চলায় বাধা দিতে খচ্চরটিকে মারতে শুরু করে। হযরত সাফিয়্যা (রা) বললেন, আমার লাঞ্ছিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি ফিরে যাচ্ছি। তুমি আমার গাবা ছেড়ে দাও। এভাবে গৃহে ফিরে এসে হযরত সাফিয়্যা (রা) হাসানকে (রা) খলীফার গৃহের সাথ যোগাযোগের দায়িত্বে নিয়োগ করেন। তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাফিয়্যার (রা) গৃহ থেকে খাবার ও পানি খলীফার বাসগৃহে পৌঁছে দিতেন।
খলীফা ‘উমার (রা) যখন ভাতার প্রচলন করেন তখন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্য বেগমদের প্রত্যেকের জন্য বারো হাজার নির্ধারণ করলেও হযরত জুওয়াইরিয়া ও হযরত সাফিয়্যার (রা) জন্য ছয় হাজার নির্ধারণ করেন। হযরত জুওয়াইরিয়া ও হযরত সাফিয়্যার (রা) প্রতিবাদ করায় তা বারো হাজার নির্ধারণ করা হয়।
সকল সীরাত বিশেষজ্ঞ হযরত সাফিয়্যা (রা) নৈতিক গুণাবলীর অকুষ্ঠ প্রশংসা করেছেন। আল্লামা ইবন ‘আবদলি বার লিখেছেনঃ
-‘সাফিয়্যা (রা) ছিলেন ধৈর্যশীল, বুদ্ধিমতি ও বিদূষী নারী।’
ইবনুল আসীর বলেছেনঃ
-‘তিনি ছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমতি মহিলা।’
আল্লামা জাহাবী বলেছেনঃ
-‘হযরত সাফিয়্যা (রা) ছিলেন ভদ্র, বুদ্ধিমতি, উঁচু বংশীয়া, রূপবতী ও দীনদার মহিলা।’
রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্য বেগমগণের মত হযরত সাফিয়্যা (রা)ও ছিলেন ইলম ও মা‘রিফারেত কেন্দ্র। প্রায়ই লোকেরা তার কাছে বিভিন্ন বিষয় প্রশ্ন করতো এবং তারা জবাব পেয়ে তুষ্ট হতো। সুহায়রা বিনত হায়কার এক মহিলা একবার হজ্জ আদায় করে হযরত সাফিয়্যার (রা) সাথে সাক্ষাৎ করতে মদীনায় আসেন। তিনি হযরত সাফিয়্যার (রা)কে যখন যান তখন দেখতে পান, সেখানে কূফার বহু মহিলা বসে আছেন এবং তাঁকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করছেন। আর তিনি খুব সুন্দরভাবে তাঁদের জবাব দিচ্ছেন।
সুহায়রাও একই উদ্দেশ্যে এসেছিলেন। তিনি কূফার মহিলাদের মাধ্যমে ‘নাবীজ’-এর হুকুম সম্পর্কে জানতে চান। প্রশ্নটি শুনে হযরত সাফিয়্যা (রা) বলেন, ইরাকীরা এই মাসয়ালাটি প্রায়ই জিজ্ঞেস করে থাকে।
হযরত সাফিয়্যা (রা) থেকে দশটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সেগুলি ইমাম যায়নুল ‘আবেদীন, ইসহাক ইবন আবদিল্লাহ ইবন হারিস, মুসলিম ইবন সাফওয়ান, কিনানা, আয়াযীদ ইবন মু‘আত্তাব প্রমুখ ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন। দশটির মধ্যে একটি হাদীস মুত্তাফাক ‘আলাইহি।
হিজরী ৫০ সনের রমযান মাসে ৬০ বছর বয়সে হযরত সাফিয়্যা (রা) মদীনায় ইনতিকাল করেন। হযরত সা‘ঈদ ইবনুল আস (রা) তাঁর জানাযার নামায পড়ান। মতান্তরে হযরত মু‘আবিয়া (রা) নামায পড়ান, তখন তিনি হজ্জ আদায় করে মদীনায় ছিলেন।৩০ আল-বাকী‘ গোরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুর পূর্বে অসীয়াত করে যান যে, আমার পরিতক্ত বিষয় সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পাবে আমার ভাগ্নে।
ইবন সাংদ আল-ওয়াকিদীর সূত্রে লিখেছেন, তিনি এক লাখ দিরহাম রেখে যান। ইবন হিশাম তিরিশ হাজারের কথা বলেছেন। হযরত সাফিয়্যার (রা)ছিল ইহুদী। এ কারণে লোকেরা তাঁর অসীয়াত বাস্তবায়নের ব্যাপারে দ্বিধা-সংকোচ করতে থাকে। কিন্তু হযরত আয়িশার (রা) কানে কথাটি গেলে তিনি লোক মারফত বলে পাঠান-‘‘লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা সাফিয়্যার (রা)সীয়াত বাস্তবায়ন করে।’’ অবশেষে তা বাস্তবায়িত হয়।
ইবন সা‘দ আল-ওয়াকিদীর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত সাফিয়্যা বলেছেনঃ যখন আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট আসি তখন আমার বয়স সতেরো বছর পূর্ণ হয়নি।৩৪ আল ওয়াকিদী আরও বলেছেন, তিনি হিজরী ৫২ সনে ইনতিকাল করেন। তাঁর অপর একটি বর্ণনায় হিজরী ৫০ সনের কথা এসেছে। ইবন হাজার ৫০ সনের বর্ণনাটিই অধিকতর সঠিক বলে মনে করেছেন। ইবন মুন্দাহ ও ইবন হিববান হিজরী ৩৬ সনে তাঁর মৃত্যুর কথা বলেছেন। কিন্তু ইবন হাজার বলেছেন, এ সম্পূর্ণ ভুল। কারণ হিজরী ৩৬ সনে ‘আলী ইবন হুসাইনের (রা) জন্মই হয়নি। অথচ বুখারী ও মুসলিমে হযরত সাফিয়্যা (রা) থেকে তাঁর ব©র্র্ণত হাসীদ সংকলিত হয়েছে। হযরত সাফিয়্যা (রা) খুব সুন্দর খাবার তৈরি করতে পারতেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন অন্য বেগমদের ঘরে অবস্থান করতেন, তখনও মাঝে মাঝে খাবার তৈরি করে পাঠাতেন। হযরত আয়িশার (রা) গরে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবস্থানের সময় একবার তিনি খাবার পাঠিয়েছিলেন, তার বর্ণনা বুখারী, নাসাঈসহ বিভিন্ন গ্রন্থে এসেছে।
একবার হযরত সাফিয়্যা (রা) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ছাড়া আপনার অন্য সব বেগমদেরই আত্মীয় স্বজন আছে। আপনার যদি কোনকিছু হয়ে যায়, আমি তখন কোথায় আশ্রয় নিব? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘আলীর (রা) নিকট। উম্মু মুমিনীন হযরত সাফিয়্যা (রা) বর্ণনা করেছেন্ একবার রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমযানের শেষ দশদিনের ই‘তিকাফে মসজিদে অবস্থান করছেন। সে সময় একদিন তিনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে সাক্ষাৎ করতে মসজিদে যান। কিছুক্ষণ রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে কথা বলার পর ঘরে ফেরার জন্য উঠে দাঁড়ান। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু সালামার দরজার কাছে মসজিদের দরজা পর্যন্ত তাঁর সথে আসেন। তখন সেই পথে আনসারদের দুই ব্যক্তি যাচ্ছিল। তাঁরা রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সারাম করলো। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের দুইজনকে বললেণঃ তোমরা একটু থাম, এ হচ্ছে সাফিয়্যা বিনত হুয়ায়। এ কথা মুনে তারা সুবহানাল্লাহ পাঠ করলো, ও তাকবীর ধ্বনি দিল। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ শয়তান আদম সন্তানের রক্ত চলাচলের প্রতিটি শিরা উপশিরায় পৌঁছতে পারে। আমি শঙ্কিত হয়েছিলাম, সে তোমাদের দুইজনের অন্তরে খারাপ কিছু ঢুকিয়ে না দেয়।
হযরত সাফিয়্যার (রা) এক দাসী একবার খলীফা হযরত উমারের (রা) নিকট অভিযোগ করলেন যে, এখনও তাঁর মধ্যে ইহুদী ভাব বিদ্যামন। কারণ, তিনি এখনও শনিবারকে মানে এবং ইহুদীদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখেন। দাসীর কথার সত্যতা যাচায়ের জন্য হযরত উমার (রা) লোক মারফত হযরত সাফিয়্যাকে (রা) অভিযোগের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন। তিনি জবাব দেন, ‘যখন থেকে আল্লাহ আমাকে শনিবারের পরিবর্তে জুম’আকে দান করেছেন, তখন তেকে শনিবারকে মানার কোন প্রয়োজন নেই। আর ইহুদীদের সাথে আমার সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো, সেখানে আমার আত্মীয়-স্বজন আছে। তাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার দিকে আমার দৃষ্টি রাখতে হয়।’ তারপর তিনি দাসীকে ডেকে জানতে চান, এ অভিযোগ করতে কে তোমাকে উৎসাহিত করছেন? দাসী বললেন, শয়তান। হযরত সাফিয়্যা (রা) চুপ হয়ে যান এবং দাসীকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করে দেন।
রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে বিয়ের পূর্বে হযরত সাফিয়্যা এক রাতে স্বপ্ন দেখেন যে, আকাশের চাঁদ ছুটে এসে তাঁর কোলে পড়ছে। স্বপ্নের কথা তাঁর মাহরামকে মতান্তরে স্বামীকে বললেন তিনি গালে এক থাপ্পড় মেরে বলেন, তুমি আরবের বাদশা মুহাম্মাদের দিকে ঘাড় লম্বা করছো। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট আসার সময় পর্যন্ত সেই থাপ্পড়ের দাগ তাঁর গালে ছিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিসের দাগ জানতে
Comments
Post a Comment