হযরত জুওয়াইরিয়া (রাঃ)


উম্মুল মু’মিনীন হযরত জুওয়াইরিয়া (রা) আরবের বিখ্যাত খুযা‘আ গোত্রের ‘মুসতিালিক’ শাখার কন্যা। পিতা হারিস ইবন দিরার ছিলন বনু মুসতালিকের নেতা।



হযরত জুওয়াইরিয়ার (রা) প্রথম বিয়ে হয় তাঁরই গোত্রের ‘মুসাফি’ ইবন সাফওয়ান’ (জী শুফার) নামের এক ব্যক্তির সাথে। তিনি ছিলেন হযরত জুওয়াইরিয়ার (রা) চাচাতো ভাই এবং ‘জী আশ-শুফার’ নামে প্রসিদ্ধ। পিতা হারিস ও স্বামী মুসাফি’ উভয়ে ছিলেন ইসলামের চরম শত্রু। পরে তাঁর পিতা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।



বনু আল-মুসতিালিক-এর যুদ্ধঃ



‘মুসতালিক’ হলো বনু খুযা‘আ গোত্রের জুজায়মা ইবন সা‘দ নামের এক ব্যক্তির উপাধি। আর বনু খুযা‘আ গেত্রের একটি পানির কূপের নাম হলো ‘আল-মুরাইসী’। বনু মুসতালিক অভিযানে হযরত রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাহিনীসহ এই কূপের ধারে অবস্তান করেন, তাই ইতিহাসে এই অভিযান ‘বনু মুসতিালিক’ অথবা ‘আল-মুরাইসী‘র যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ। এ অভিযান পরিচালিত হয় হিজরী পঞ্চম সনের শা’বানমাসে। অবশ্য অনেকে ষষ্ঠ সনের কথাও বলেছেন।৪ কিন্তু তা সঠিক মনে হয় না।



হিজরী পঞ্চম সনে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খবর পেলেন যে, বনু আল-মুসতালিখ-এর নেতা হারিস ইবন দিরার মক্কার কুরাইশদের প্ররোচনায় নিজের ও অন্য আরব গোত্রের লোকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনী নিয়ে মদীনা আক্রমণের তোড়জোড় শুরু করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খবরটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বুরাইদা ইবন আল-হুসাইব আল-আসলামীকে (রা) পাঠালেন। তিনি সেখানে পৌঁছে সরাসরি হারিসের সাথেকথা বলে বুঝলেন, ঘটনা সত্য। তিনি সাথে সাথে ফিরে এসে রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রকৃত অবস্থা জানালেন। কাল বিলম্ব না করে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদেরকে অভিযানের প্রস্ত্ততি গ্রহণের নির্দেশ দিলেন।



বাহিনী প্রস্ত্তত হলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়িদ ইবন হারিসা (রা), মতান্তরে আবু জার আল-গিফারীকে মদীনায় নিজের স্থলাভিষিক্ত করে নিজেই বাহিনী নিয়ে যাত্রা করেন। কোন কোন বর্ণনায় নুমাইলা ইবন ‘আবদিল্লাহ আল-লাইসীকে মদীনায় খলীফা হিসেবে রেখে যাওয়ার কথা এসেছে। যা হোক, তিনি পঞ্চম হিজরীর শা‘বান মাসের ২ তারিখমদীনা থেকে বের হন এবং মদীনা থেকে নয় মানযিল দূরে মুরাইসী‘ পৌঁছ যাত্রাবিরতী করেন।



হারিসের নেতৃত্বে হঠিত কাফিরদের সম্মিলিত বাহিনীর নিকট সব খবর পৌঁছে গেল। তারা ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়লো। অন্যান্য আরব গোত্র প্রতিরোরে ইচ্ছাত্রাগ করে যার যার মত বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল। হারিসের সংগে থাকলো শুধু তার গোত্রের লোকেরা। তারা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালো এবঙ দীর্ঘক্ষণ তীর-বর্শা ছুড়ে ছুড়ে মুসলিম বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখলো। অবশেষে মুসলিম বাহিনী হঠাৎ করে এক সাথে আক্রমণ করে বসে এবং শক্র বাহিনীকে পরাজিত করে। নেতা আল-হারিস পালিয়ে যায়।



এগারোজন কাফির সৈন্য মারা যায় এবং অন্যরা সকলে বন্দী হয়। মুসলিমবাহিনীর কোন সৈন্য শাহাদাত বরণ করেনি। তবে ভুলক্রমে হযরত উবাদা ইবন সামিতের (রা) হযরত হিশাম ইবন সাবাবা নামে এক ব্যক্তি শহীদ হন। শক্রুপক্ষের পুরুষ-নারী-শিশু মিলে প্রায় ৬০০ জন বন্দী হয় এবং তাদের দুই হাজার উট, পাঁচ হাজার ছাগল-ভেড়া গনীমাত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) হিসেবে মুসরিম বাহিনী লাভ করে।



এই যুদ্ধ বন্দীদের মধ্যে হযরত জুওয়াইরিয়াও (রা) ছিলেন। ইবন ইসহাক বর্ণনা করেছেন এবং হাদীসের কোন কোন গ্রন্থেও তাঁর বর্ণনাটি সংকরিত হয়েছে। সকল যুদ্ধবন্দীকে দাস-দাসী ঘোষনা করে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈনিকদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়। হযরত জুওয়াইরিয়া (রা) পড়নে হযরত সাবিত ইবন কায়সের (রা) মতান্তরে তাঁর চাচাতো ভাইয়ের ভাগে। তিনিছিলেন গোত্রীয় নেতার কন্যা। তদুপরি তাঁর ছির প্রবল আত্মাসম্মানবোধ, কোমল স্বভাব, রূপ ও যৌন্দর্য। দাসীর জীবন মেনে নিতে পারলেন না। তিনি হযরত সাবিত ইবন কায়সের (রা) নিকট মুকাতাবা-এর আবেদন জানালেন। সাবিত (রা) নয় উকিয়া স্বর্ণের বিনিময়ে দাসত্ব থেকে মুক্তিদানের ‘মুকাতাবা’ বা চুক্তি করলেন। কিন্তু হযরত জুওয়াইরিয়া (রা) এ পরিমাণ অর্থ কোথায় পাবেন? তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, মানুষের কাছে সাহায্যের হাত পেতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করবেন।



হযরত রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গনীমাতের মাল বণ্টন শেষ করার পর হযরত জুওয়াইরয়া (রা) তাঁর সামনে এস বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ইসলাম গ্রহণ করে এসেছি। আশদহাদু আন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্নাকা রাসূলুহু’। আমি আমার গোত্রপতি হারিস ইবন দিরারের কন্যা। মুসিলম বাহিনীর হাতে বন্দী হয়ে এসেছি এবংয় সাবিত ইবনকায়সের ভাগে পড়েছি। সাবিত আমার সাথে ‘মুকাতাবা’ করেছেন। কিন্তু আমি অর্থ পরিশোধ করতে পারছিনে। আমি আপনার নিকট এই প্রত্যাশা নিয়ে এসেছি যে, আপনি আমার চুক্তিবদ্ধ অর্থ পরিশোধে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি এর চেয়ে ভালো কিছু আশা কর না? তা কী? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তোমার চুক্তিকৃতসকল অর্থ পরিশোধ করে দিই এবং তোমাকে বিয়ে করি। এমনঅপ্রত্যাশিত প্রস্তাবে হযরত জুওয়াইরিয়া (রা) দারুণ খুশী হন এবং সম্মতি প্রকাশ করেন। অতৎপর হযরত রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাবিতকে ডেকে পাঠান এবং চুক্তিকৃত অর্থ তাঁকে দান করে জুওয়াইরিয়াকে (রা) দাসত্ব থেকে মুক্তি করেন। তারপর তাঁকে বিয়ে করে স্বাধীন স্ত্রীর মর্যাদা দান করেন। ইবন ইসহাক ঘটনাটি এভাবে বণৃনা করেছেন।



অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, হযরত জুওয়াইরিয়ার (রা) পিতা হারিস ছিলেন আরবের একজন অন্যতম নেতা। মুসলিম বাহিনীর হাতে তাঁর কন্যা বন্দী হলে তিনি রাসূলুল্লারহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট এসে বলেন, ‘আমার কন্যা দাসী হতে পারে ন। আমার মর্যাদা দাসত্বের অনেক উর্ধ্বে। আপনি তাঁকে মুক্ত করে দিন।’ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বিষয়টি জুওয়াইরিয়ার মর্জিন উপর ছেড়ে দেওয়া হোক-সেটাই কি ভারো হবে না? হারিস কন্যা জুওয়াইরিয়ার নিকট যেয়ে বললেন, মুহাম্মদ তোমার মর্জির উপর তোমাকে ছেড়ে দিয়েছেন। দেখ, তুমি যেন আমাকে লজ্জায় ফেলো না। জুওয়াইরিয়া পিতাকে বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে থাকতে পছন্দ করছি।’ অতৎপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বিয়ে করেন।



ইবন সা‘দ তাবাকাতে একথাও উল্লেখ করেছেন যে, তাঁর পিতাই তাঁর মুক্তিগণ পরিশোধ করেন। যখন তিনি সম্পূর্ণ স্বাধনি হয়ে যান তখন তঁর সম্মাতিতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বিয়ে কনের।



বিয়ের খবর যখন মুসরিম মুজাহিদদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো, তখন তাঁরা বললেন, বনু আল-মুসতালিক তো এখন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্মানিত শ্বশুরকুল। যে খান্দানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিয়ে করেছেন, তাঁরা কক্ষণো দাস-দাসী হতে পারে না। এরপর তাঁরা পরামর্শ করলেন এবং একজোট হয়ে একসাথে সকল বন্দীকে মুক্ত করে দিলেন।



ইবনুল আসীর রিখেছেন, এই উপলক্ষে বনু মুসতালিকের এক শো বাড়ীর সকল বন্দী মুক্তি পায়। ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম আহমাদ হযরত ‘আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ



‘আমি কোন নারীকে তর সম্প্রদাযের জন্য জুওয়াইরিয়া থেকে অধিকতর কল্যাণময়ী দেখিনি।



ইবন ইসহাক বলেছেন, এক শো বাড়ী অর্থ এক শো মানুষ নয়। কেননা, তাদের সংখ্যা সাত শো’রও অধিক ছিল। এক শো বাড়ী অর্থ এক শো বাড়ীর মানুষ।



ইবনুল আসীরসহ অনেকে ঘটনাটি এভাবেও বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জুওয়াইরিয়া (রা) রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রী হিসেবে ঘর করা শুরু করেছেন। পিতা হারিস তা জানতেন না। তিনি কন্যাকে মুক্ত করার জন্য অনেকগুলি উটের উপর মুক্তিপণের অর্থ সম্পদ বোঝাই করে মদীনার দিকে যাত্রা করেন। পথে ‘আকীক উপত্যকায় পৌঁছে উটগুলি চরানোর জন্য লাগামমুক্ত করে দেন। সেই উটগুলির ম¨য দুইটি উট ছির তাঁর অতি প্রিয়। এ কারণে তিনি উট দুইটি একটি গোপন স্থানে বেঁরোখেন। এরপর তিনি মদীনায় রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দরবারে পৌঁছে আরজ করেন



‘আপনি আমার বন্যাকে বন্দী করে নিয়ে এসেছেন। এই নিন তার মুক্তিগণ এবং তাকে আমার সাথে যাওয়ার অনুমতি দিন।’



তাপর তিনি যে অর্থ-সম্পদ, উট ইত্যাদি নিয়ে এসেছিলেন, এক এক করে সবই উপস্থাপন করতে লাগলেন। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, ‘সেই উট দুইটি কোথায়, যাদেরকে আকীক উপত্যকায় রুকিয়ে রেখে এসেছো?



রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই অবগতিতে হারিস দারুণ বিম্মিত হলেন। তিনি সাথে সাথে কালেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে যান। তারপর তিনি জানতে পারলেনযে, যাঁকে মুক্ত করতে তিনি ছুটে এসেছেন, তিনি এত দিনে নবীগৃহের শোভায় পরিণত হয়েছেন। তিনি কন্যার এমন সৌভাগ্যে দারুণ পুলকিত হলেন এবং অত্যন্ত আনন্দের সাথে কন্যার সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তারপর খুশী মনে তাঁকে সাথে নিয়ে নিজ গোত্রের আবাসভূমির দিকে যাত্রা করলেন।



আল-ওয়াকিদী হযরত ‘উরওয়ার সূত্রে বণৃনা করেছেন। হযরত জুওয়াইরিয়া (রা) বলেছেন, নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমনের তিনদিন পূর্বে আমি স্বপ্নে দেখলাম, যেন ইয়াসরিবের দিক থেকে চাঁদ ছুটে এসে আমার কোলে পড়লো। কোন মানুষকে একথা বলা আমি ভালো মনে করিনি। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে গেলেন। যখন আমি বন্দী হলাম, তখন আমার দেখা স্বপ্নের রূপ রাভের আশা করলাম। তারপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে মুক্ত করে বিয়ে করলেন। আমি এ স্বপ্নের কথা আমার গোত্রের কাউকে বলিনি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যে আগমন ঘটেছে সে কথা আমার এক চাচাতো বোন আমাকে না বলা পর্যন্ত আমার কিছুই জানা ছিলনা। অতঃপর আমি আল্লাহ তা‘আলার হামদ পেশ করলাম।১২ ইমাম মুসলিম হযরত ইবন আববাসের (রা) একটি বর্ণনা সংকলন করেছেন। তিনি বলেন:



-‘‘হযরত জুওয়াইরিয়ার (রা) প্রথম নাম ছিল ‘বাররা’। বিষের পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিবর্তনকরে জুওয়াইরিয়া রাখেন।’’ কারণ, প্রথম নামটির মধ্যে কিছুটা আত্ম-প্রশন্তির ভাব বিদ্যমান থাকায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাতে অশুভ ও অকল্যাণের ইঙ্গিত দেখতে পান। এ কারণে তিনি তা পছন্দ করেরন।। হযরত ইবন ‘আববাসের (রা) একটি বর্ণনায় এসেছেঃ



-‘তিনি তাঁকে ‘বাররা’ বলা অপছন্দ কররেন। তাই তাঁর নিকট থেকে বেরিয়ে গেলেন।’



আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বলেছেন -

-‘‘তোমার নিজেদেরকে পূতঃপবিত্র মনে করো না।’’


মূলতঃ এ আয়াতের দিকে লক্ষ্য রেখেই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নামটি পরিবর্তন করেন।



ইবন সা‘দ হযরত জুওয়াইরিয়ার (রা) দেন-মাহর সম্পর্কে বলেছেনঃ



-বনু আল-মুসতালিক-এর প্রতিটি বন্দীর মুক্তি তাঁর মাহর হিসেবে ধার্য হয়।



রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে হযরত জুওয়াইরিয়ার (রা) যে সময় বিয়ে হয় তখন তিনি মাত্র বিশ বছর বয়সের এক মহিলা। হযরত ‘আয়িশা (রা) প্রথম দর্শনেই তাঁকে যথেষ্ট রূপবতী এবং তাঁর চাল-চলন কুবই মিষ্টি-মধুর বলে মনে করেছেন। হযরত ‘আয়িশা (রা) তাঁর রূপ-যৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ



-জুওয়ারিয়ার মধ্যে মধুরতা ও ছলাকলা উভয় রকমের ঘুণ বিদ্যমান ছিল। কেউ তাঁকে দেখলেই তাঁর অন্তরে স্থান করে নিতেন।



ইমাম আজ-জাহাবী বলেনঃ



‘তিনি ছিলেন সেরা রূপবতী মহিলাদের একজন।’



তিনি ছিলেন খুবই ব্যক্তিত্বসম্পন্না মহিরা। তাঁর মধ্রে ছির সীমাহীন আত্মাসম্মানবোধ। তার প্রমাণ হরো, দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য তার অস্থিরতা ও চেষ্টা সাধনা। পার্থিব ভোগ-বিলাসিতার প্রতি ছিলেন নির্মোহ এবং আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি ছিলেন একাগ্রচিত্ত। হাদীসের একাধিক বণৃনায় জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কাছে এসে তাঁকে তাসবী ও তাহলীলে মশগুল দেখতে পেয়েছেন।



খলীফা উমার (রা) যখন ভাতা প্রচলন করলেন তখন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিবিগণের মধ্যে সাফিয়্যা (রা) ও জুওয়াইরিয়া (রা) ব্যতীত অন্য সকলের জন্য বারো হাজার করে নির্ধারণ কররেন।তাঁকে দুইজনের জন্য করলেন ছয় হাজার করে। তাঁদের দুইজনেরজীবনের এক পর্যায়ে দাসত্ব থাকার কারণে তিনি এমন করে। কিনউত তাঁরা উমারের (রা) আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত কররেন এবং ভাতা গ্রহণোস্বীকৃতিজানালেন। তাঁরা সমতার দাবী জানালেন। উমার (রা) তাঁদের দাবী মানতে বাধ্র হরেন। অন্য একটি বর্ণনায় মায়মূনার (রা) কথাও এসেছে এবং বারো হাজারের স্থরে দশ হাজার এসেছে।



একদিন সকালে হযরত রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখলেন যে, হযরত জুওয়াইরিয়া (রাঃ) মসজিদে বসে দু‘আ করছেন। তিনি চলে গেলেন। দুপুরে এসে তাঁকে একই অবস্থায় পেয়ে বললেন, তুমি সব সময় এ অবস্থায় থাক? সেই অবস্থায় তিনি ‘হাঁ’ বলে জবাব দিলেন। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে ভালো কিছু কথা শিখিয়ে দিব না, যা তোমার এই নফল ইবাদাত থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ? তারপর তিনি তাঁকে এ দু‘আ শিখিয়ে দেনঃ

অবশ্য বিভিন্ন বর্ণনায় কিছু ভিন্নতাও আছে।



ইবন সা‘দের একটি বর্ণনায় এসেছে। এক জুম‘আর দিন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত জুওয়াইরিয়ার (রা) নিকট আসলেন। সেদিন জুওয়াইরিয়া (রা) রোযা রেখেছিলেন। তিনি যেহেতু একটি মাত্র রোযা রাখা পছন্দ করতেন না, এ কারণে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি গতকাল রোযা রেখেছিলে? তিনি জবাব দিরেন ‘না’। তিনি আবার জনাতে চাইলেরন আগামীকাল রাখার ইচ্ছা আছে কি? বরলেনঃ না। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে তুমি ইফাতর করে রোযা ভেঙ্গে ফেল।



হযরত রাসূলে কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। সব সময় তাঁর ঘরে আসা-যাওয়া করতেন। একবার তাঁর ঘরে এসে জিজ্ঞেস করেন ‘খাওয়ার কিছু আছে কি?’ তিনি জবাব দিরেনঃ ‘আমার দাসী কিছু সাদাকার গোশত দিয়েছিল, শুধু তাই আছে। তাছাড়া আর কিছু নেই।’ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বররেনঃ তাই নিয়ে এসো। কারণ, সাদাকা যাকে দেওয়া হয়েছিল তার নিকট পৌঁছে গেছে।



হযরত জুওয়াইরিয়া (রা) রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাতটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার মধ্রে ইমাম বুখারী একটি ও মুসলিম দুইটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর কাছে যাঁরা হাদীস শুনেছেন তাঁদের মধ্রে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেনঃ ইবন আবআস, জাবির, ইবন ‘উমার, ‘উবাইদ ইবন আস-সাবাক, তুফাইল, আবু আইউব মুরাগী, মুজাহিদ, কুরাইব, কুলসুম ইবন মুসতালিক, ‘আবদুল্লাহ ইবন শাদ্দাদ ইবন আল-হাদ প্রমুখ।



হিজরী ৫ম সনে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে বিয়ের সময় হযরত জুওয়াইরিয়ার (রা) বয়স ছির বিশ বছর। সঠিক মত অনুযায়ী হিজরী ৫০ (পঞ্চাশ) সনের রবঅউল আওয়াল মাসে তিনি মদীনায় ইনতিকাল করেন। তখন তাঁর বয়স ৬৫ (পঁয়ষট্টি) বছর। তৎকালীন মদীনার গভর্নর মারওয়ান জানাযার নামায পড়ান। তাঁর কবর মদীনার আল-বাকী‘ গোরস্তানে। মুহাম্মদ ইবন উমারের বর্ণনা মতে তাঁর মৃত্যুসন হিজরী ৫৬।



রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারে উৎপন্ন সফল থেকে আশি ওয়াসাক খেজুর এবং বিশ ওয়াসাক যব, মতান্তরে গম হযরত জুওয়াইরিয়ার (রা) জীবিকার জন্য নির্ধারণ করেন।



হযরত জাবির (রা) বর্ণনা করেছেন। একবার হযরত জুওয়াইরিয়া (রা) রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি এই দাসটি মুক্ত করে দিতে চাই। তিনি বললেনঃ ওকে তুমি তোমার মামাকে দিয়ে দাও-যনি গ্রামে থাকেন। সে তাঁকে দেখাশুনা করবে। এত তুমি বেশি সাওয়াব পাবে।



রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকালের পর হযরত জুওয়াইরিয়া (রা) দীর্ঘদিন বেঁচে ছিলেন। কিন্তু তাঁর এ সময়ের কর্মকান্ড সম্পর্কে

Comments

Popular posts from this blog

হযরত হাফসা (রাঃ)

হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রা)

হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)