Posts

Showing posts from April, 2018

হযরত সুমাইয়া (রাঃ)

আরবের আগুন ঝরা মধ্যাহ্ন। উর্ধাকাশ থেকে মরু-সূর্য যেন আগুন বৃষ্টি করছে। মরুর লু’ হাওয়া আগুনের দাব-দাহ নিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকটা। এমনি সময় আগুন ঝরা মরুভূমির বুকে নির্যাতন চলছে এক নারীর উপর- সুমাইয়ার উপর। ইসলাম প্রচারের শুরুতেই যাঁরা রাসূলের (সা) আহবানে সাড়া দিয়েছিলেন, সুমাইয়া তাঁদেরই একজন। সুমাইয়ার নারী দেহ ভংগুর, স্পর্শকাতুরে, কিন্তু আত্মা তা অজেয়। বক্ষে তাঁর বিশ্বাস-ঈমানের দুর্জয় শক্তি ও সাহস। সে প্রাণ বহ্নি নির্বাপিত হবার মত নয়। সুমাইয়ার উপর এ নির্যাতন কেন? কেন তাঁকে এই প্রখর মধ্যাহ্নে সূর্যের বহ্নিতলে ক্রুর নির্যাতন চালানো হচ্ছে? তাঁর অপরাধঃ এক আল্লাহকে প্রভু হিসাবে স্বীকার করেছেন, তাঁর যুগ ধরে পূজ্য লাত ওজ্জা-হোবলদের বিরোধিতা করেছেন, তাঁর জীবন মৃত্যু-সাধনা সব কিছুই নিবেদন করেছেন আল্লাহর নামে। অমানুষিক নির্যাতনেও সুমাইয়া অচল অটল। তাঁর দেহ নির্যাতন নিপীরনে জর্জরিত হোক, তাঁর কোমল দেহ পুড়ে ছাই হয়ে যাক, তবু অসত্যের কাছে, অত্যাচারের কাছে তাঁর অমর আত্মা কখনও নতি স্বীকার করবেনা। এত কষ্ট দিয়েও শত্রুর মন টললো না। ইসলামের শত্রু আবু জাহল সুমা...

হযরত সাফিয়্যা (রাঃ)

উম্মুল মু’মিনীন হযরত সাফিয়্যা (রা) বিনত হুয়ায় ইবন আখতাব ছিলেন লাবী ইবন ইয়াকু-এর বংশধারায় হযরত হারুন ইবন ইমরান আলাইহিস সালামের বংশধর। এ কারণে তাঁকে সাফিয়্যা বিনত হুয়ায় ইসরাঈলিয়্যা বলা হয়। তাঁর পিতা হুয়ায় ইবন আখতাব মদীনার বিখ্যাত ইহুদী গোত্র বনু নাদীরে এবং মাতা ‘বাররা’ বিনত সামাওয়াল ইহুদী গোত্র বনু কুরাইজার সন্তান। মূলতঃ হরত সাফিয়্যার (রা) আসল নাম যায়নাব। যেহেতু তিনি খায়বার যুদ্ধের গনীমাতের মাল হিসেবে মুসলমানদের অধিকারে আসেন এবং বণ্টনের সময় রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাগে পড়েন, আর তৎকালীন আরবে নেতা অথবা বাদশার অংশের গনীমাতের মালকে সাফিয়্যা বলা হতো, তাই যায়নাবও সেখানে থেকে সাফিয়্যা নামে প্রসিদ্ধ হয়ে যান এবং তাঁর আসল নামটি হারিয়ে যায়। সিয়ারুস সাহাবিয়াত’ গ্রন্থকার যুরকানীর সূত্রে একথা বলেছেন। হযরত সাফিয়্যার (রা) পিতা ও নানা উভয়ে নিজ নিজ খান্দানের অতি সম্মানীয় নেতা ছিলেন। অতি প্রাচীনকাল থেকে আরবের উত্তরাঞ্চলে বসবাসরত ইহুদী সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁদের দুইটি খান্দান-বনু কুরাইজা ও বনু নাদীর অন্যসব আরবীয় ইহুদী খান্দানের চেয়ে বেশি সম্মান ...

হযরত যায়নাব বিনত খুযায়মাকে (রাঃ)

হযরত যায়নাব বিন্ত খুযায়মা ইবন আল-হারিস আল-হিলালিয়্যা ছিলেন বনু বাকর উবন হাওয়াযিনের কন্যা। তাঁর উপাধি বা লকব ছির উম্মুল মাসাকীন। উহুল যুদ্ধে তাঁর স্বামী শাহাদাত বরণ করলে ঐ বছরই রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বিয়ে করেন এবং তিনি উম্মুল মু’মিনীন-এর অতুলনীয় মর্যাদার অধিকারিণী হন। হযহর যায়নাব বিন্ত খুযায়মার (রা) প্রথম বিয়ে কার সাথে হয় সে ব্যাপারে মতপার্থক্য আছে। বালাজুরী, ইবনুল কালবী এবং নসববিদ আবুল হাসান আলী আল-জুরজাননীর মতে, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে বিয়ের আগে তার প্রথম স্বামী ছিলেন তুফইল ইবন আল-হাসি। তুফাইলইবন আল-হারিস। তুফাইল তালাক দিলে তার ভাই উবায়দা ইবন আল-হারিস তাঁকে বিয়ে করেন। বদরে তিনি আহত হয়ে আস-সাফরাতে মারা যান। তখন উবায়দার বয়স ৬৪ বছর। তারপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৃতীয় হিজরীর রমযান মাসে তাঁকে বিয়ে করেন। একথা বালাজুরী ও ইবন সা’দ বলেছেন। ইউনুস ইবন মুহাম্মদ, ইবন ইসহাকের সূত্রে বলেছেন, পূর্বে তিনি আল-হুসাইন ইবনুল হারিস ইবন-আবদিল মুত্তালিবের স্ত্রী ছিলেন, অথবা তাঁর ভাই আত-তুফাইল ইবন আল-হা...

হযরত যায়নাব (রাঃ)

উম্মুল মু’মিনীন হযরত যায়নাব এর ডাকনাম ছিল উম্মু হাকাম। তাঁর পিতা ছিলেন বনু আসাদ ইবন খুযায়মা গোত্রের জাহাশ ইবন রাবাব আল-আসাদী এবং মাতা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফুফু উমায়মা বিনত ‘আবদিল মুত্তালিব। সুতরাং তিনি রাসূলুল্লাহর (সাল-াল¬াহ ‘আলাইহি ওয়া সাল¬াম) আপন ফুফাতো বোন। হযরত যায়নাবের (রা) দুই ভাই-‘উবায়দুল্লাহ ইবন জচাহাশ ও আবু আহমাদ ইবন জাহাশ হযরত আবু সুফইয়ানের (রা) দুই মেয়ে যথাক্রমে উম্মু হাবীবা ও ফারি‘আকে বিয়ে করেন। তাঁর আর এক ভাই ‘আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ (রা) উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। কাফিররা তাঁর পেট ফেড়ে লাশ বিকৃত করে ফেলে। তাঁকে তাঁর মামা হযরত হামযার (রা) সাথে উহুদ প্রান্তরে একই কবরে দাফন করা হয়। হামনা বিনত জাহাশ ও উম্মু হাবীবা বিনত জাহাশ হযরত যায়নাবের দুই বোন। দুই জনেরই মেয়েলী রোগ ‘ইসতিহাজা’ ছিল। তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট প্রায়ই এ সম্পর্কিত নানা মাসয়ালা জিজ্ঞেস করতেন। একারেণ হাদীসে তাঁদের উল্লেখ দেখা যায়। হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ এবং তাঁর অন্য সকল ভাই-বোন প্রথম পর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্ল...

হযরত ফাতেমা জাহরা (রাঃ)

পৃথিবীতে এমন কয়েকজন অসাধারণ মানুষ জন্ম নিয়েছেন যাঁরা মানবজাতির চিরন্তন গৌরব, যাঁরা আদর্শ মানুষের প্রতীক তথা মানবতা ও মনুষ্যত্বের পূর্ণতার মডেল। এ ধরনের মানুষ পৃথিবীতে জন্ম না নিলে আদর্শের দিক থেকে মানবজাতির মধ্যে বিরাজ করতো ব্যাপক অপূর্ণতা এবং আদর্শিক শূণ্যতা ও আধ্যাত্মিক অপূর্ণতার অশেষ ঘূর্ণাবর্তে মানবজাতি হতো বিভ্রান্ত, ফলে মানুষ কাঙ্ক্ষিত উন্নতির সোপান থেকে চিরকালের জন্য থাকতো পিছিয়ে। কিন্তু মহান আল্লাহর অশেষ প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি যে তিনি এমন কয়েকজন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন যাঁরা মানুষের জন্য সব ধরনের পূর্ণতা ও উন্নতির আদর্শ। নবী-নন্দিনী খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা জাহরা (রাঃ) সেই সব অসাধারণ মানুষেরই একজন। এটা স্বাভাবিক যে এ ধরনের মানুষের অকাল বিদায় বা বিয়োগ-বিধুর শাহাদত শোকের সাহারায় সৃষ্টি করে অনন্ত মাতম। শোকের এই অনন্ত মাতমে একদিকে যেমন তাঁদের প্রতি খোদাভীরু মানুষের শ্রদ্ধা ও গভীর ভালবাসা বিধৃত হয়, তেমনি শোককে শক্তিতে পরিণত করে ঐসব মহান ব্যক্তিত্বের আদর্শ এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও সুদৃঢ় করা সম্ভব হয়। হযরত ফাতেমা জাহরা (রাঃ) ছিলেন নারী ও পুরুষ তথা গ...

হযরত জুওয়াইরিয়া (রাঃ)

উম্মুল মু’মিনীন হযরত জুওয়াইরিয়া (রা) আরবের বিখ্যাত খুযা‘আ গোত্রের ‘মুসতিালিক’ শাখার কন্যা। পিতা হারিস ইবন দিরার ছিলন বনু মুসতালিকের নেতা। হযরত জুওয়াইরিয়ার (রা) প্রথম বিয়ে হয় তাঁরই গোত্রের ‘মুসাফি’ ইবন সাফওয়ান’ (জী শুফার) নামের এক ব্যক্তির সাথে। তিনি ছিলেন হযরত জুওয়াইরিয়ার (রা) চাচাতো ভাই এবং ‘জী আশ-শুফার’ নামে প্রসিদ্ধ। পিতা হারিস ও স্বামী মুসাফি’ উভয়ে ছিলেন ইসলামের চরম শত্রু। পরে তাঁর পিতা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। বনু আল-মুসতিালিক-এর যুদ্ধঃ ‘মুসতালিক’ হলো বনু খুযা‘আ গোত্রের জুজায়মা ইবন সা‘দ নামের এক ব্যক্তির উপাধি। আর বনু খুযা‘আ গেত্রের একটি পানির কূপের নাম হলো ‘আল-মুরাইসী’। বনু মুসতালিক অভিযানে হযরত রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাহিনীসহ এই কূপের ধারে অবস্তান করেন, তাই ইতিহাসে এই অভিযান ‘বনু মুসতিালিক’ অথবা ‘আল-মুরাইসী‘র যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ। এ অভিযান পরিচালিত হয় হিজরী পঞ্চম সনের শা’বানমাসে। অবশ্য অনেকে ষষ্ঠ সনের কথাও বলেছেন।৪ কিন্তু তা সঠিক মনে হয় না। হিজরী পঞ্চম সনে রাসূলুল্লাহ...

হযরত উম্মু হাবীবা (রাঃ)

উম্মুর মু’মিনীন হযরত উম্মু হাবীবা (রা) কুরাইশ নেতা হযরত আবু সুফইয়ানের (রা) কন্যা। ইসরাম পূর্ব মক্কার কুরাইশদের তিন ব্যক্তি-‘উতবা, আবু জাহল ও আবু সুফইয়ান খুব দাপটের নেতা ছিলেন। কুরাইশদের সামরিক ঝান্ডা ‘ইকাব’ আবু সুফইয়ানের কাছেই থাকতো। তিনি ছিলেন একজন বড় ব্যবসায়ী। শাম, রোম ও আজমে তিনি বাণিজ্য কাফেলা পাঠাতেন। মাঝে মাঝে কাফেলার সাথে তিনি নিজেও যেতেন। এই আবু সুফইয়ানের আসল নাম সাখর ইবন হারব। আবু সুফইয়ানের এক কন্যা যায়নাব। তার বিয়ে হয় তায়েফের দাউদ ইবন ‘উরওয়া ইবন মাস‘উদ আসা-সাকাফীর সাথে। অপর দুই কন্যার বিয়ে হয় উম্মুল মু’মিনীন হযরত যায়নাব বিনত জাহাশের (রা) দুই ভাইয়ের সাথে। ফারি‘আকে আবু আহমাদ ইবন জাহাশ এবং উমুম হাবীবাকে উবাইদুল্লাহ ইবন জাহাশ বিয়ে করেন। আবু সুফইয়ানের এক পুত্র হযরত মু‘আবিয়া ৯লা)। আমীরুল মুমিনীন হযরত আলীল (রা) সাথে যার সংঘা ও সংঘর্ষ হয়। এই মু‘আবিয়ার (রা) পুত্র ইয়াযীদ রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাতি হযরত ইমাম হুসাইনকে (রা) কারবালায় শহীদ করেন। মু‘আবিয়া (রা) উমাইয়্যা খিলাফতের প্রতিষ্টা করেন। আবু সুফইয়ানের স্ত্রী হিন্দা বিনত ‘উতবা...